রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ফের ভর্তি বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। অবৈধভাবে প্রথম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তির অভিযোগে মো. শাহ আলম খান নামে এক শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্তও করা হয়েছে। তিনি প্রতিষ্ঠানটির মূল দিবা শাখার (বাংলা ভার্সন) প্রধান।

বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) ভিকারুননিসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধরীর সই করা চিঠিতে তাকে সাময়িক বরখাস্তের কথা জানানো হয়। একই সঙ্গে তাকে কেন স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না, সেই মর্মে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

নোটিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি সংক্রান্ত কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে মাউশি কর্তৃক জারিকৃত ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির জন্য প্রযোজ্য নির্দেশনা অনুসরণ না করে অনিয়মতান্ত্রিক উপায়ে ভর্তির জন্য চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করা হয়েছে মর্মে অভিযোগ রয়েছে। প্রাথমিকভাবে তদন্তে মূল দিবা (বেইলি রোড) শাখা প্রধান মো. শাহ আলম খানের সরাসরি সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়ায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

অধ্যক্ষ স্বাক্ষরিত মো. শাহ আলম খান বরাবর পাঠানো চিঠিতে লেখা হয়েছে, ‘আপনি একজন দায়িত্বশীল শাখা প্রধান ও সিনিয়র শিক্ষক হয়ে এমন গর্হিত কাজ করার কারণে বিভিন্ন মহলে ভর্তি কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে এবং জনসম্মুখে প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে’।

স্কুল সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করার জন্য লটারি হলেও সেখানে বেশ কিছু বার্থ সার্টিফিকেট পাওয়া গেছে যেগুলো অনলাইনে সার্চ করে ভুয়া প্রমাণিত হয়েছে।

এর আগেও শাহ আলমের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের বিজ্ঞপ্তি ছাড়া একই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীর ৩ সন্তানকে অবৈধভাবে ভর্তি করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে আসন খালি না থাকায় দ্বিতীয় থেকে তদূর্ধ্ব শ্রেণিতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না করলেও অত্র প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের শিক্ষক প্রতিনিধি ও অন্যান্য শিক্ষকদের সহযোগিতায় বিভিন্ন শ্রেণিতে অবৈধভাবে অর্থের বিনিময়ে তিন জন শিক্ষার্থী গত বছর ভর্তি করা হয়।

শিক্ষার্থীর ভর্তির আবেদনপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মেইন শাখার দিবা বিভাগের প্রধান মো. শাহ আলম খান ছাড়াও শিক্ষক প্রতিনিধি আব্দুর রাজ্জাক আকন্দ, শিক্ষক প্রতিনিধি চাঁদ সুলতানা, আজিমপুর শাখা প্রধান শাহরীমা চৌধুরীর সুপারিশে এই তিনজন শিক্ষার্থীকে অবৈধভাবে ভর্তি করা হয়। এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করা হয়।

জানা যায়, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তি বাণিজ্যের অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। ২০১৯ সালের ১৬ জানুয়ারি ভিকারুননিসায় বাড়তি শিক্ষার্থী ভর্তির খবর পেয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে পরিদর্শনে যান দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দুই কর্মকর্তা। গত ৭ বছরে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তিসহ নানান বিষয়ে হাইকোর্টে দেড় শতাধিক রিট করা হয়েছে। ভর্তি বাণিজ্যের বিষয়টি বারবার সামনে আসলেও এ বিভাগটি দুর্নীতিমুক্ত করা যায়নি।

অবৈধ ভর্তি বাণিজ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে মো. শাহ আলম খান প্রথমে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে আপনি নিজেকে নির্দোষ মনে করেন কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, ‘আপনি বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না, আমি শতভাগ নির্দোষ। আমি সৃষ্টিকর্তার সামনে ও প্রিন্সিপ্যালের সামনে এ কথা বলেছি’।

২০২৪ শিক্ষাবর্ষে শাহ আলম ৫ সদস্যের ভর্তি কমিটিরও সদস্য ছিলেন। সেখানে অনিয়ম হলে কোনো দায় নেবেন কিনা প্রশ্নে বলেন, ‘যে কোনো দোষ প্রমাণ হলে আমি শাস্তি মাথা পেতে নেবো। আমার এখানে ৬৪ জন শিক্ষক আছে। সব শিক্ষকের কাজ এক রকম না। যারা ভাল তাদের দিয়ে কাজ করাই। তারা কোনো ভুল করে থাকলে আমার কিছু করার থাকে না। এছাড়া যেসব ভর্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সেসব শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের সাথে কথা না বলেই আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে’।